

৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক : ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত সগরভাঙ্গা জোনাল সেন্টার সংলগ্ন রাস্তা । নাম বনফুল সরনী , নামে যতই কৃষ্টির বাহার থাক , আপাতত গোটাটাই খানাখন্দ , যেখানে যেতে হলে “ভুবন দোলে”। গত ১০ বছর ধরে এভাবেই দুলছে গাড়ীঘোড়া , মানুষ জন। রাস্তা নামক খন্দে পড়ে মানুষের জীবন কয়লা , ঘটে যায় দুর্ঘটনা । নাহ , কোন প্রান্তিক গ্রাম নয় , একসময় স্মার্ট সিটির খুব কাছাকাছি চলে আসা দুর্গাপুর নামক এক নগর সভ্যতার শিল্পতালুকের একটি রাস্তা। যে রাস্তার ওপর সাধারন মানুষের বসবাসের পাশাপাশি রয়েছে একাধিক নামজাদা শিল্প। রয়েছে দুর্গাপুর নগর নিগমের সুসজ্জিত বোরো কার্যালয়। সেই রাস্তা নাকি গত ১০ বছর ধরেই ঠিক হইয়াও হইতেছে না। এলাকাবাসীদের আন্দোলন, রাজনৈতিক দলের আন্দোলন , সব হজম করে রাস্তা আপাতত নিজের মর্যাদায় অক্ষুন্ন । জনান্তিকে শোনা গেল ৪ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকার টেন্ডার হয়ে গেছে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে। তা সত্বেও নাকি কোন ঠিকাদার কাজ করতে চাইছে না। খোঁজ নিতেই ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে কাদায় লুটোপুটি। সদ্য প্রাক্তন বোরো চেয়ারম্যান সুনীল চ্যাটার্জীর “ধমাকাদার” উক্তি, “শুনেছি এডিডিএর কাজ করতে হলে নাকি উঠতে বসতে এ টু জেড পয়সা দিতে হয়, তাই ঠিকেদাররা কাজ করতে চাইছে না”। তিনি আরও বললেন যে আমরা নগরনিগমে ক্ষমতায় এলে এই রাস্তা করে দেব । সে তো নয় বোঝা গেল ওনারা করবেন , কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে , এতদিন তো ছিলেন , রাস্তার টোলও নিয়েছেন , তাহলে করেননি কেন ?

এবার আসি জর্জরিত জনতার কথায়। ঠোকা খেয়ে , দোকান বাড়ীর কাঁচ ভেঙ্গে , বাইক উল্টে হাত পা ভেঙ্গে ভেঙ্গে আন্দোলনে ক্লান্ত জনগন মুক্তির উপায় যখন খুঁজছে , সেইসময় রাতের অন্ধকারে কোন এক সংস্থা রাস্তার ওপর ছাই ঢালছিল, কেলেংকারি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা আর কি ! জনতা গর্জে উঠল , ছাই ঢালা যাবে না। কারন এই ছাই সকাল হলেই ছড়িয়ে পড়বে , তাতে তো মরার ওপর খাঁড়ার ঘা । রবিবার সন্ধ্যেয় সেই প্রতিবাদটুকু করেছিল জনগন , আর কোকওভেন থানার পুলিশ এসেই নাকি খেদিয়ে দিল তাদের। তবে ভালবেসে নয় , রীতিমতন নাকি মারধোর করে, অভিযোগ করছে এলাকার মহিলা তৃপ্তি সাহা , শুভশ্রী কুন্ডুরা। অভিযোগ,বাদ যায়নি মহিলা শিশুরাও। আর এতেই ঘৃতাহুতি হল।
সোমবার সকাল থেকেই ফের দফায় দফায় বিক্ষোভ স্থানীয়দের। এবার এর মধ্যে ঢুকে পড়ল রাজনৈতিক বিরোধীরা। বিজেপি নেতা চন্দ্রশেখর ব্যানার্জী বললেন ,”সঠিক বলেছেন প্রাক্তন বোরো চেয়ারম্যান , যেকোন ঠিকেদারকে ১০% কাটমানি দিতে হয়। জোনাল সেন্টারের প্লট অনুমোদনের ম্যাপে এই রাস্তা সার্ভিস রোড হিসেবে দেখানো আছে,তাতে বড় গাড়ী যাওয়ার কথা নয় , তবুও শিল্পের তাগিদে সেটা হোক কিন্তু রাস্তা টা সারাই হোক”। পাশাপাশি তিনি পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে দোষী পুলিশ কর্মীদের শাস্তি দাবী করেন।

সিপিআইএমও পিছিয়ে নেই। এদিন তারা রাস্তার ওপরেই বিক্ষোভ শুরু করে। সেই বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে বোরো চেয়ারম্যানের কার্যালয়েও। বাম নেতা পঙ্কজ রায় সরকার শাসকদলকে তীব্র আক্রমন করে বলেন,” সুনীল বাবুরা তো চুনোপুঁটি, রাঘব বোয়ালরা সব এডিডিএ তে রয়েছে , কাটমানির ভাগে কমবেশীর কারনেই আজ এই হাল,সবাই তৃণমূল। আমরাই প্রথম এই রাস্তার আন্দোলন শুরু করেছিলাম , বনফুল সরনী বানাতেই হবে এদের”।
মোদ্দা কথা হল, রাস্তার টাকা টেন্ডারে অনুমোদন হলেও রাস্তা হয়নি , তৃণমূলের নেতা অভিযোগ করছে এডিডিএর বিরূদ্ধে কাটমানির। আবার এই রাস্তায় টোল নিচ্ছে নগর নিগম । আপাতত সব ঘেঁটে ঘ ! কিন্তু রাস্তা কার ? এডিডিএ না নগরনিগম ? প্রশ্ন নিশ্চয়ই থাকছে । উল্লেখ্য , সামনেই রয়েছে পৌরসভার নির্বাচন। উত্তর কি ভোটবাক্সে মিলবে ? শাসকের চিন্তার বলিরেখার সংখ্যা ক্রম বর্ধমান।