
৯৯ বাংলা নিউজ ডেস্ক: এক নজরে দেখলে বোঝার উপায় নেই বিয়েবাড়ি না কি সরস্বতী পুজো।কারণ এখানে আজই প্রেমের দিন। ভালবাসাবার সূচনার দিন। প্রতিষ্ঠানের বেড়াজাল বছরের অন্য সময়ে। আজ সব বিধিনিষেধ ছিঁড়ে ফেলার পালা। একে অন্যের কাছে ছুটে যাওয়ার অন্তহীন আকর্ষণ। হাতে রাখা তত্ত্বের থালায় গোপন চিঠিতে লেখা সেই আকর্ষণের কথা। দেখা হবেই তাঁর সঙ্গে। সরস্বতী পুজো অর্থাৎ বাঙালির অঘোষিত প্রেমদিবসের পরদিন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্লস এবং বয়েজ হস্টেলের মধ্যে তত্ত্ব আদানপ্রদান প্রাচীন একটি রীতি। আর সেই রীতির হাত ধরেই এই মাঘে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নেমে আসে অকাল বসন্ত।
চিরাচরিত জিন্স-টপ, সালোয়ার-কুর্তা ছেড়ে মেয়েদের পরনে আজ রঙিন শাড়ি, এলোচুল কিংবা খোঁপায় ফুল। ছেলেরাই বা কম কীসে? পাঞ্জাবি-পাজামায় দিব্যি পরিণত বয়স্কদের মতো আপ্যায়ণের ব্যস্ততা শরীরী ভাষায়। এদিন প্রথমে ছাত্রদের হস্টেল থেকে ফল,মিষ্টি, চিপস, চকলেটে ভরা তত্ত্বের থালা পৌঁছে যায় গার্গী, নিবেদিতা, সরোজিনী, মিরাবাঈয়ের আবাসিক ছাত্রীদের কাছে। বিয়ের মত গায়ের হলুদের সাজে তত্ত্বের ডালা সাজিয়ে রঙের বেরঙের শাড়ি পরে ছাত্রীরাও অরবিন্দ, নেতাজী, চিত্তরঞ্জন, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্র ছাত্রাবাসে হাজির হয়। এই দিনটায় গার্লস হস্টেলের গেটে তাদের বাধা দেওয়ার কেউ নেই। ওদের হাত থেকে তত্ত্ব গ্রহণ করে আড়চোখে দেখে নেওয়া পছন্দের পুরুষটিকে। আর তারপর, রাত জেগে নিজেদের সাজানো তত্ত্ব নিয়ে মেয়ের দল পৌঁছে যায় অরবিন্দ বা রবীন্দ্র হস্টেলে। সঙ্গে শঙ্খ, ঢাক। রাস্তায় সে এক দেখার মতো দৃশ্য। অনেকেই দাঁড়িয়ে পড়ে পথ ছেড়ে দেন ছাত্রীদের। তত্ত্ব সাজানো আর আলপনা আঁকা, এই দুই কাজে ছাত্রছাত্রীরা একে অপরকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। অলিখিত এই প্রতিযোগিতার মাঝে যেন বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোয় যদি এই তত্ত্ব আদানপ্রদানের রীতিকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা যায়, তাহলে চমক অবশ্যই প্রতিটি হস্টেলে পৃথক পৃথক বাণীবন্দনা। তাতে থিমের ছড়াছড়ি। কোনও শিল্পীর সাহায্য নয়, নিজেদের হাতেই থিমের মণ্ডপ গড়ে তোলেন ছাত্রছাত্রীরা।এবছর অরণ্য সংরক্ষণ থিমকে সামনে রেখে আমাজনের অগ্নিকাণ্ড, অস্ট্রেলিয়ার দাবানলের ক্ষতিকে তুলে ধরে মণ্ডপ সাজিয়েছে একটি ছাত্রাবাস। কোথাও আবার সাবেকি মণ্ডপ। তার সামনে যেন বাসন্তী রাঙা শাড়ির মেলা। এভাবেই মা সরস্বতীকে সাক্ষী রেখে ভালবাসার অর্ঘ্যরচনা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রেমপর্ব আবহমান কাল ধরে চলছে, চলবেও।গোটা রাজ্যের মধ্যে অন্যতম বর্ধমান শহরের বিশ্ব বিদ্যালয়ের গোলাপবাগে বয়েজ ও গালর্স হোষ্টেলের সরস্বতী পুজো উপলক্ষে তত্ত্ব আদান প্রদান সম্পূর্ণ মনে হবে বিয়ে বাড়ি । ফুল ফুটুক না ফুটুক, এখানে আজ বসন্ত।