
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া : বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে যে কী কী জড়িত তা হয়তো শহুরে জীবন এত সহজে তা ঠাহর করতে পারবে না। তেমনি গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জাপটে থাকে রোজকার সহজ যাপন। রাঢ় বাংলার মানুষের খাদ্যতালিকায় থাকা অন্যতম হল প্রিয় মুড়ি। বাঁকুড়ার অন্যতম প্রাচীন জনপদ কেঞ্জাকুড়া। এই কেঞ্জাকুড়ার একপ্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে দ্বারকেশ্বর নদ। সেই নদের ধারেই মাতা সঞ্জীবনী মন্দির। আর এইখানেই প্রায় দু’শো বছরের প্রাচীন প্রথা মেনে বৃহস্পতিবার কেঞ্জাকুড়া দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে সঞ্জীবনী মাতার মন্দিরে পুজো দিয়ে বাৎসরিক ‘মুড়ি মেলা’য় অংশ নিলেন অসংখ্য মানুষ।
শীতের হালকা রোদ গায়ে মেখে এদিন সকাল থেকে নদীর চরে বসে শুধুমাত্র মুড়ি খাওয়ার আনন্দে বন্ধু বান্ধবকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন অনেকেই। বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ‘মুড়ি মেলা’র আগাম খবর পেয়ে অভিনব আনন্দ উৎসবের স্বাদ নিতে দর্শকরা এসেছেন।
এদিন সকাল থেকে দলে দলে ‘মুড়ি মেলা’য় আসা মানুষ চপ, সিঙ্গাড়া, তেলেভাজা, ঘুগনি, চানাচুর, কাচা লঙ্কা, শশা, মুলা, পেঁয়াজ, টম্যেটো, ধনেপাতা, নারকেল, বাদাম সহ অন্যান্য উপকরণ দিয়ে মুড়ি মেখে একসাথে বসে খেলেন। পাশাপাশি দ্বারকেশ্বর নরম বালি হাত দিয়ে সরিয়ে গর্ত তৈরী করে অর্থাৎ স্থানীয় ‘চুয়া’ তৈরী করে বের হওয়া মিঠা জলে গলা ভেজালেন।
সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক করতে পারে ‘মুড়ি’। কেঞ্জাকুড়ার দ্বারকেশ্বর নদী তীরের সঞ্জীবনী মাতার মন্দির সংলগ্ন এই ‘মুড়ি মেলা’য় না এলে বিশ্বাসই করা যাবেনা। দিনে দিনে বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের মধ্যেও এই ‘মুড়ি মেলা’কে কেন্দ্র করে আগ্রহ বাড়ছে তো বিন্দুমাত্র কমেনি।
বস্তুত, এই মেলায় আগত এক মুড়ি প্রেমী বলেন,একসময় দূর দূরান্তের মানুষ সংকীর্তন শুনতে এই সঞ্জীবনী মাতার আশ্রমে আসতেন। সারা রাত সংকীর্তন শুনে তাঁরা ফিরে যেতেন নিজের নিজের গ্রামে। কীর্তন শুনে ফেরার পথে সঙ্গে আনা মুড়ি দারকেশ্বর নদের চরে বসে খেতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুণ্যার্থীদের সেই অভ্যাসই পরিণত হয়েছে রীতিতে।নদের চরের বালিতে গামছা বিছিয়ে নানা পদের সঙ্গে পাহাড় সমান মুড়ি নিয়ে চলে খাওয়া দাওয়া।