
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক,দুর্গাপুর : দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় যেন শনির দশা চলছে! এবার মধ্যরাতে এক স্থায়ী কর্মীর দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু হল।
গতকাল মধ্যরাতে র মেটিরিয়াল হ্যান্ডেলিং প্ল্যান্টে কর্মরত অবস্থায় কনভেয়ার বেল্টে আটকে গিয়ে খন্ড-বিখন্ড হয়ে গেলেন সিনিয়র টেকনিশিয়ান আশুতোষ ঘোষাল। গোটা ঘটনায় কার্যত হতবাক শ্রমিক মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ববৃন্দ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য দশ দিন আগেই গলিত লোহা ছিটকে ৩ ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হয় । একজন এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সূত্র মারফত জানা গেছে,গতকাল রাতে কর্মরত অবস্থায় আশুতোষ ঘোষাল হঠাৎই কনভেয়ার বেল্ট এর ওপর পড়ে যান। এরপরই তার দেহ খন্ড বিখন্ড হয়ে যায়। প্রায় ঘন্টা দুয়েকের প্রচেষ্টায় দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ইস্পাত কলোনির বঙ্কিমচন্দ্র এভিনিউয়ের বাসিন্দা আশুতোষ বাবুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে শ্রমিক মহলে। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী ও পুত্র। দিন কয়েকের মধ্যেই একমাত্র ছেলের বিবাহ স্থির হয়েছিল।
গতকালের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে শ্রমিক মহল। সবকটি রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠন কারখানার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। গতকালই ইস্পাত কারখানায় আরও একটি দুর্ঘটনা ঘটে। ব্লুমিং মিল ফ্লোরে প্রজেক্ট বিভাগের অধীনে কাজ করছিলেন ঠিকা কর্মীরা। সেই সময় এক ঠিকা কর্মী বিভূতি বিশ্বাস পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে পুরনো একটি লাইন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করতে যান। আচমকাই কন্ট্রোল ফিউজ সিস্টেম(সিএফএস) বিস্ফোরণ হয়ে তার গায়ে আগুন ধরে যায়। তড়িঘড়ি প্রথমে তাকে প্লান্ট মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় ও পরবর্তীকালে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
ইস্পাত কারখানার সিটু নেতা সৌরভ দত্ত গত রাতের দুর্ঘটনার সম্পর্কে বিশদে জানালেন। গতরাতে আশুতোষ ঘোষাল কাজ করছিলেন র মেটেরিয়াল হ্যান্ডেলিং প্লান্টের (RMHP) পুরোনো সাইট এ। র মেটিরিয়াল হ্যান্ডেলিং প্লান্টের হাই লাইনে রিক্লেমার মেশিনের বেডে দাঁড়িয়ে তিনি কাজ করছিলেন। এই রিক্লেমার মেশিন থেকে লৌহ আকরিক প্রায় ৫/৬ ফুট নীচে কনভেয়ার বেল্টে পড়ে। এবং যিনি রিক্লেমার মেশিন চালাচ্ছেন , তাঁকে মাঝে মধ্যে ঝুঁকে পড়ে দেখতে হয় যে কনভেয়ার বেল্ট বন্ধ হল কি না। কিন্তু নিরাপত্তার মাপকাঠিতে নিয়ম অনুযায়ী কনভেয়ার বেল্ট বন্ধ হলে রিক্লেমার মেশিন বন্ধ হয়ে যাবে , যা রয়েছে র মেটিরিয়াল হ্যান্ডেলিং প্লান্টের নতুন ইউনিটে। কিন্তু পুরনো ইউনিটে তা নেই। ফলে সেক্ষেত্রে মেশিন অপারেটরকেই ঝুঁকে দেখতে হয় যে কনভেয়ার বেল্ট ঠিকমত চলছে কিনা । কারন বেল্ট না চললে লৌহ আকরিক কনভেয়ার বেল্টে জমা হয়ে গিয়ে উৎপাদন ব্যহত হবে। এরই অন্যপ্রান্তে রয়েছে স্টিল কার্ট । সৌরভ বাবুর বক্তব্য অনুযায়ী কনভেয়ার বেল্ট চালু রয়েছে কিনা তা দেখতে গিয়ে কোনভাবে পড়ে যান আশুতোষ বাবু এবং কনভেয়ার বেল্টে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। এবং অপর প্রান্তে যে স্টিল কার্ট রয়েছে,সেখানে তাঁর পা ঢুকে যায় এবং দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। তিনি বলেন , কতৃপক্ষকে বারংবার বলা সত্বেও এই মেশিনের আধুনিকীকরন করা হয়নি , ১৯৬০ সাল থেকে এইভাবেই চলছে ।
একের পর এক দুর্ঘটনার জেরে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে শ্রমিক মহলে। কারখানার শ্রমিক নেতাকর্মীদের অভিযোগ, নিরাপত্তা বিভাগের গাফিলতির কারণেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে যদি নিরাপত্তার দিকটি পর্যালোচনা না করে তাহলে আগামী দিনে এই দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। তাদের অভিযোগ, প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটির আশ্বাস দিচ্ছেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। একের পর এক দুর্ঘটনায় একদিকে ক্ষোভ , অন্যদিকে আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে শ্রমিক মহলে।
গতরাতে স্থায়ী কর্মী আশুতোষ ঘোষালের মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সিটুর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। কি করে দুর্ঘটনা ঘটলো,ইস্পাত কারখানার সিটু নেতৃত্বের কাছে তিনি বিবরণ জানতে চেয়েছেন।