
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক,দুর্গাপুর : কেউ কিছু জানে না,কেউ কিছু দেখেনি , শুধু আওয়াজ শুনেছে,আর দেখেছে তড়িঘড়ি রক্তাক্ত অবস্থায় এক ব্যক্তিকে কিছু লোক নিয়ে উধাও , কোথায় গেছে তাও কেউ জানেনা। সোমবারের বিকেলে দুর্গাপুরের আমড়াই গ্রামের বিষ্ফোরনে আপাতত এইটুকুই উঠে এসেছে।, ঘটনাস্থলে এসিপির নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী তদন্ত চালাচ্ছে। আপাতত পুলিশ ও মুখে কুলুপ এঁটেছে। তবে শাসক দলের একটি মহল থেকে জানা যাচ্ছে,তাতে গোষ্ঠী-দ্বন্দের আঁচ পাওয়া গেলেও “অন্য কিছু”র সম্ভাবনাও থাকছে।
এদিন বিকেল ৪টে নাগাদ বিশাল বিষ্ফোরনে কেঁপে ওঠে এলাকা। আমড়াই গ্রামের মাদ্রাসা পাড়ার একটি বাড়ী থেকে এই বিষ্ফোরনের আওয়াজ পাওয়া যায়। আশেপাশের বাড়ী থেকে সবাই ছুটে এলেও ওই বাড়ীতে কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয় না। কেউ কিছু বোঝার আগেই রক্তাক্ত এক ব্যাক্তিকে নিয়ে এলাকা ছাড়ে কিছু যুবক , যাওয়ার আগে অবশ্য ঘটনাস্থল ধুয়ে সুগন্ধী ছড়িয়ে যায় বলে জানা গেছে। যে ব্যাক্তি আহত হয়েছে তার নাম শেখ আনসার রহমান ওরফে শেখ কাজল।
আশ্চর্যের ব্যাপার হল , শেখ কাজলের স্ত্রী সোমা বিবিও কিছু দেখেনি, শুধু দেখেছে স্বামী আহত হয়ে মাটিতে পড়ে আছে এবং পাড়ার ছেলেরা তাকে নিয়ে যাচ্ছে। এই “পাড়ার ছেলেরা” কারা,সে বিষয়ে অবশ্য উনি কিছু জানাতে পারেননি।
এলাকার এক তৃণমূল কর্মী জানান যে এই গ্রামে যত অশান্তির মূল কারন মনি ওরফে আমিনুল রহমান এবং আহত শেখ কাজল মনিরুলের অনুগামী। এই মনিরুলের সাথে ওয়ার্ডের তৃণমূলের কোন যোগ নেই বলে দাবি ওই তৃণমূল কর্মীর,তবে উচ্চ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে জানতে পারে বলে জানান তিনি।
২০১১ সাল থেকেই তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় শ্রমিক সংগঠনের দখলদারি নিয়ে আমড়াই গ্রামের সাহাবুদ্দিন বনাম মনির লড়াই সুবিদিত। শাসকের এই দখলদারির লড়াইয়ে বোমাবাজি,গুলিচালনা একাধিক বার ঘটেছে। বারে বারে অশান্ত হয়েছে এলাকা , আমড়াই গ্রামে দুই গোষ্ঠীর লড়াই মাথাব্যাথার কারন হয়েছে পুলিশের। এবং এই দ্বন্দকে অক্সিজেন জুগিয়ে গেছে এ শহরেরই শাসক দলের কিছু নামজাদা নেতা। কিন্তু এদিন ঠিক কি ঘটল ? শাহাবুদ্দিন অনুগামী তৃণমূল কর্মী শেখ সুরমার বক্তব্য অনুযায়ী ইদানীং কালে আইএনটিটিইউসি জেলা সভাপতি অভিজিত ঘটকের সাথেই দেখা যায় মনি কে। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে ফের গোষ্ঠীদ্বন্দের আভাষ।
কিন্তু এদিন কি ঘটল ? বোমা বাঁধছিল কেউ ? কিসের বিষ্ফোরন হল ? নাকি মজুত করা কিছুতে বিষ্ফোরন ঘটল? কেনই বা এত লুকোচুরি ? আহত কাজলই বা গেল কোথায় ?
এসিপি দুর্গাপুর তথাগত পান্ডে জানালেন যে একটা ঘটনা ঘটেছে, তবে তিনি এক্সপার্ট নন , অর্থাৎ ফরেন্সিক পরীক্ষা ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান সম্পর্কেও তিনি কিছু জানান নি।
বিগত বেশ কয়েক বছর আগে পাশের জেলা বর্ধমানের খাগড়াগড় নিশ্চয়ই সবার স্মৃতিতে উজ্জ্বল। তাহলে সেরকম কিছু নয় তো ? এদিন সন্ধ্যা নামতেই সে প্রশ্নও কিন্তু তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে শহরবাসীকে।