
নিজস্ব প্রতিবেদন,পূর্ব বর্ধমান : গা ছমছমে ঘটনা ঘটল পূর্ব বর্ধমানের রায়নার মাধবডিহি থানার অন্তর্গত উচালন গ্রামের হাজরা পাড়ায়।কখনো হঠাৎ করেই গৃহস্থের বাড়ির ঘরে ও বাইরের বিভিন্ন জায়গায় আগুন ধরে যাচ্ছে।আবার কখনো নানান ভুতুড়ে কান্ড ঘটছে চারিচত্বরে।গ্রামের কেউ কেউ মনে করছেন ,এটা অলৌকক কোন ঘটনা হতে পারে। আবার অন্যদের মতে, ব্রহ্মশাপে এমন ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।আর এইসব কথা লোক মুখে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই গ্রামজুড়ে তুমুল আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
যদিও বিজ্ঞানমঞ্চ মনে করছে, ব্রহ্মশাপ বা অলৌকিক ঘটনার ভাবনাটাই ভ্রান্ত।তাদের মতে, এমন ঘটনা ঘটানোর নেপথ্যে নিশ্চই কেউ রয়েছে। রায়না বিধানসভার মাধবডিহি থানা এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম উচালন হাজরা পাড়া ।সেই পাড়াতেই সপরিবারে বসবাস করেন,রেণুকা হাজরা। তাদের গোটা বাড়ি যেন এক প্রকার লণ্ডভণ্ড হয়ে রয়েছে। বাড়ির উঠানে ফেলা রয়েছে আগুনে পোড়া তোষক, চাদর ,পর্দা সহ আরো নানা কিছু । কিন্তু কি ভাবে এইসব ঘটলো? আতঙ্কের কারণটাই বা কি ?এই কথা জানতে চাওয়া হলে রেণুকাদেবী বলেন,ছেলে কর্মসূত্রে বাইরে থাকে।আমি এবং আমার পরিবারের সবাই খুব আতঙ্কে আছি। সাত আট দিন হল হঠাৎ করেই বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় ঘরের বিছানায়, পর্দায়, গোয়ালরে আগুন ধরে যাচ্ছে। এমন ঘটনা কখনো দিনের বেলায় ঘটছে , আবার কখনো সন্ধ্যার পর ঘটছে। এদিন সকাল ৮টায় ও বেলা সাড়ে ১২ টায় দুটি ঘরের বিছানায় আচমকাই আগুন ধরে যাচ্ছে। কিন্তু কি ভাবে আগুন ধরছে সেটা আমারা কেউই কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। দরজা বন্ধ করে দিয়ে সবাই বাইরে বেরিয়ে যাবার পরেও ঘরের বিছানায় আগুন কি ভাবে ধরে যাচ্ছে সেটাই আমাদের আশ্চর্য লাগছে। এটা কোনো অলৌকিক ঘটনা ,নাকি ভৌতিক কোন ব্যাপার ,সেটাও বুঝে উঠতে পারছেন না বলে রেণুকাদেবী মন্তব্য করেন।
পরিবারের বধূ সুপর্ণা হাজরা বলেন,বাড়িতে তাঁর বাচ্চা সন্তান রয়েছে। ভয়ে আতঙ্কে এখন তাকে প্রতিবেশীর বাড়িতে রাখছেন। কি ভাবে আগুন লাগছে তার কোন ’ক্লু“ খুঁজে পাচ্ছেন না। ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে দিয়ে গোটা বাড়ির ইলেকট্রিক লাইন চেক করিয়েছেন।সেও বাড়ির ইলেকট্রিক লাইনে কোন ফল্ট খাঁজে পায় নি। তবুও হঠাৎ ঘরে আগুন লেগে যাচ্ছে। এছাড়াও সুপর্নাদেবী বলেন , ” আমাদের হাজরা পাড়ায় নানা দেবদেবীর মন্দির রয়েছে।কোন কারণে দেবতা রুষ্ট হয়ে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন,নাকি ব্রহ্মশাপে এমন আলঁকিক ঘটনা ঘটছে তার কিছুই বুঝতে পারছেন না।” গ্রামের বাসিন্দা পুষ্প হাজরা বলেন,“এমন ঘটনা তিনি সিনেমায় দেখেছেন,গোয়েন্দা ও ভূতের গল্পের বইয়ে পড়েছেন। আর এখন তিনি সেইসব বাস্তবে দেখতে পাচ্ছেন। “
এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সদস্য তাপস কার্ফা বলেন,“এইসব ঘটনার পিছনে তিনি কোন অলৌকিকতা বা ভৌতিক কিছু দেখছেন না। একই রকম ঘটনা সম্প্রতি জেলার কুসুমগ্রামে ঘটেছিল।তখন বিজ্ঞানমঞ্চ ও পুলিশ যৌথ ভাবে তদন্ত চালিয়ে ও খোঁজ খবর নিয়ে নিশ্চিৎ হয় মানসিক ভাবে হতাশাগ্রস্ত পরিবারের এক সদস্য ওই ঘটনা ঘটাচ্ছিলেন। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা কিছু হবে বলেই তাপসবাবু মনে করছেন।”তবে বিজ্ঞানমঞ্চের এই দাবি হাজরা পরিবার ও তাঁদের প্রতিবেশীরা কেউ মানতে চান নি।