
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক , দুর্গাপুর : দোরগড়ায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপুর নগর নিগমের নির্বাচন। খুব সম্ভাবনা জানুয়ারীর মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহে । কিন্তু নির্বাচন ইস্যুর থেকেও বর্তমানে শাসক দলের কারা টিকিট পাবে , সেটাই মোদ্দা কথা, জানতে উৎসুক তৃণমূল নেতা কর্মী থেকে সাধারন মানুষ। যারা বিগত বোর্ডের কাউন্সিলর , তাদের মধ্যে কোপ পড়বে কাদের ওপর ? কারাই বা থাকবে ?
যথেষ্ট গোপনে সমীক্ষা হয়েছে ৪৩ ওয়ার্ডেই। সমীক্ষা করানোর যিনি প্রধান কারিগর , তার নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর , “আই প্যাক”(পিকে-র সংস্থা) র ধাঁচে সমীক্ষা চালানো হয় শহরের সবকটি ওয়ার্ডে। দলের নিজস্ব ” হাইকম্যান্ড স্ট্র্যাটেজি প্ল্যানার” এই সমীক্ষা চালায়। তার রিপোর্ট কার্ড ইতিমধ্যেই তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ডের টেবিলে শোভা পাচ্ছে।
এই রিপোর্ট কার্ডেই দুর্গাপুরের আগামী তৃণমূলের ভবিষ্যত লুকিয়ে। যা নিশ্চয়ই বিবেচিত হবে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। সুত্রের খবর , আই প্যাকেরই কিছু প্রাক্তন কর্মীদের দিয়ে এই সমীক্ষা চালানো হয়। ২/৩ জনের টিম কলকাতা থেকে এসে এই সমীক্ষা চালায় , কখনও দুর্গাপুরে থেকেও চালানো হয়। এই সমীক্ষায় আম জনতার পাশাপাশি গুরুত্ব পেয়েছে কাউন্সিলর ও বোরো চেয়ারম্যানদের বক্তব্যও।
সুত্রের খবর , সেই সমীক্ষায় প্রাক্তন মেয়র অনিন্দিতা মুখার্জীর নম্বর আদৌ স্বস্তিদায়ক নয়। তাঁর ক্ষেত্রে দুটি বিষয় এই সমীক্ষায় উঠে এসেছে । তাঁর সম্পর্কে রিপোর্টে ” মোর অটোক্র্যাট” কথাটি উল্লেখ আছে। এর অর্থ , মেয়র থাকাকালীন গনতান্ত্রিক পদ্ধতি তিনি অবলম্বন করেন নি। সদা হাস্যময়ী , মিষ্টভাষী , আদ্যপ্রান্ত সংষ্কৃতিমনস্ক এ হেন ব্যাক্তিত্বের বিরূদ্ধে কেন এমন অভিযোগ ? যখন কিনা দিলীপ অগস্তির পদত্যাগের পর তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নগর নিগমের ব্যাটন তুলে দিয়েছিলেন অনিন্দিতা দেবীর হাতেই।

সুত্রের খবর , মেয়র থাকাকালীন তাঁর বেশীর ভাগ সিদ্ধান্ত তিনি নিজে নিয়ে , পরে তা বোর্ড মিটিংএ পেশ করতেন। যেমন , কোন কাজের টেন্ডার তিনি আগে ঘোষনা করে , পরে তা বোর্ড মিটিংএ উল্লেখ করতেন। যা নিয়ে দলের মধ্যে তাঁর বিরোধীরা তো বটেই , তাঁর অনুগামী কাউন্সিলর বা বোরো চেয়ারম্যানেরাও অভিষেক ব্যানার্জীর সমীক্ষাকারী টিমের কাছে মুখ খুলেছেন। প্রায় ৩ মাস ধরে চলা এই সমীক্ষায় একাধিক কাউন্সিলর ও বোরো চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাতের পরই “হাইকম্যান্ড স্ট্রাটেজি প্ল্যানার” তাঁর সম্পর্কে “মোর অটোক্র্যাট” মন্তব্য করেছে।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি তাঁর বিপক্ষে গেছে , তা হল সম্পত্তি বৃদ্ধি। তবে এক্ষেত্রে তিনি শুধু একা নন , অভিষেকের কাছে আরও একাধিক কাউন্সিলরের সম্পত্তি বৃদ্ধির হিসেব জমা পড়েছে। তবে প্রাক্তন মেয়রের ক্ষেত্রে সেই হিসেবের অঙ্কটা রীতিমত চোখ কপালে তোলার মত। তিনি এবং তাঁর “ডিপেন্ড্যান্ট” এর সম্পত্তি বৃদ্ধি হয়েছে রকেটের গতিতে এবং এই বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে প্রোমোটারি। “হাইকম্যান্ড স্ট্র্যাটেজি প্ল্যানার” টিম এই সম্পত্তি বৃদ্ধি ইস্যুতে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরি তৈরী করেছিল। যেমন অকৃষিজাত জমি , বসবাসযোগ্য জমি , বানিজ্যিক জমি , ফিক্সড ডিপোজিট , এল আইসি , এনএসসি বা পোস্ট অফিস , সোনা-দানা গহনা ইত্যাদি। টিম অভিষেকের রিপোর্ট অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে অনিন্দিতা দেবীর সম্পত্তি বৃদ্ধির পরিমান ৪৩৯ % ও তাঁর “ডিপেন্ড্যান্ট” দের সম্পত্তি বৃদ্ধির পরিমান ৩৮৩০% । সুত্রের খবর,এই সমীক্ষা ছিল প্রাথমিক এবং সেই রিপোর্ট গিয়েছে একটি বেসরকারী সমীক্ষা সংস্থার কাছে , যারা বর্তমানে এই ইস্যুতেই সক্রিয় বলে জানা গেছে।
এক্ষেত্রে , এই রিপোর্টের পরে আদৌ কি টিকিট পাবেন প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান পৌর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান ? তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ে সম্প্রতি দুর্গাপুরের এক স্বনামধন্য ব্যবসায়ীর রকেটগতিতে রাজনৈতিক উত্থান যে প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যেই তুলে দিয়েছে।