
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক : আর মাত্র কদিন , তারপরেই জানা হয়ে যাবে কার হাতে উঠবে সোনালী কাপ। কিন্তু গত কয়েকদিনে মধ্যপ্রাচ্যের রুক্ষ মরুশহরে আবেগের টুকরো টুকরো মুহুর্ত গুলোকে কোলাজ করলে এবারের বিশ্ব ফুটবল কিন্তু দেওয়ার থেকে কেড়ে নিল অনেককিছুই। তবে আবেগ বিষ্ফোরনের সেরার তালিকায় নিশ্চয়ই থাকবে জিতেও বিপক্ষের সেরা কোহিনুরের সাথে হাত মেলানো খুদে সমর্থকের। সে আবার যে সে সমর্থক নয়,তার বাবা দলের নির্ভরযোগ্য ফুটবলার। কিন্তু বাবা নয়, হৃদয় জিতেও হেরে যাওয়া স্বপ্নের নায়কের দিকেই ছুটে এল ছোট্ট লিও। ক্রোয়েশিয়ার নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় ইভান পেরিসিচের ছেলে। খেলা শেষের বাঁশি বাজার পর এদিনের ম্যাচে যেখান থেকে সেই স্বপ্নের দৌড় টা শুরু করেছিলেন নেইমার, শেষ করেছিলেন এক অতিমানবীয় কপিবুক গোল দিয়ে,ঠিক তার কয়েক গজ আগেই শুন্য দৃষ্টিতে গ্যালারির দিকে তাকিয়ে বসেছিলেন। কয়েক মুহুর্ত আগেই হেডস্যার রেফারি বাঁশি বাজিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, এবারের মতন বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের ছুটি। টিভির ক্লোজ আপে তখন মহাতারকার চোখে জল। অথচ মাত্র ঘন্টাখানেক আগেই তাঁর করা এ বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোলে গোটা মাঠে সাম্বার ছন্দ। নিরাপত্তা রক্ষীকে যেভাবে ডজ করে লিওকে ছুটে আসতে দেখা গেল , আরেক লাতিন আমেরিকান বেঁটে মানুষের সাথে খুব মিল রয়েছে। এসেই হাত বাড়িয়ে দিলেন ব্রাজিলিয় তারকার দিকে। পরনে ক্রোয়েশিয়ার জার্সি, স্বপ্নের নায়ক নেইমারের হাতে হাত ছোট্ট লিওর, যে ব্রাজিল ভক্তরা এই দৃশ্য দেখলেন,নিশ্চিত তাদের চোখের জলেও ভিজল মরুশহর। কি বলতে পারে লিও ?
এতদুর থেকে আন্দাজ করা মুশকিল হলেও নিশ্চিত বলেছে,”ভেঙ্গে পড় না নায়ক,বাবারা যতই শেষচারে উঠুক, আমার তালিকায় তুমিই সেরা “। নেইমারের মুখেও তখন একচিলতে হাসি, স্বর্গীয় মুহুর্তের সৃষ্টি হল মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে। এইজন্যই তো বিশ্বকাপ,এই জন্যই তো আবেগ, এই জন্যই তো মহারন , যা তোলা থাকে চারবছর, বিষ্ফোরন ঘটায় মুল রঙ্গমঞ্চে।
গ্রুপ লিগ থেকেই বেরিয়ে গেছে লড়াকু জার্মান, শেষবার সাদা,হলুদ,কালো জার্সিতে চোখের জলে মাঠ ছেড়েছেন আর এক কিংবদন্তী ম্যুলার। তবে পর্তুগাল নায়কের শেষটা বড্ড মন কেমন করা। গোটা দল তখনও মাঠে, মাথা নীচু করে শিশুর মতন কাঁদতে কাঁদতে ড্রেসিংরুমে ফেরা , বিশ্ব শেষবার কবে এইরকম মহানায়কের বিদায় দেখেছে,তা নিয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর শেষটা গোলাপের পাপড়ি নয়,কাঁটা হয়েই থাকল। শুধু ওই সোনালী কাপটা ছাড়া ফুটবলের আর সব খেতাবই পকেটে। তবুও স্টেডিয়ামের বেসমেন্টের করিডর দিয়ে নিজের শরীরটা কে টেনে নিয়ে যাওয়ার মধ্যে ছিল “পারলাম না” র হতাশা। শেষে কি না মরক্কোর কাছে !
তবে মহানায়কের অস্তাচলে যাওয়ার দিনে আফ্রিকার সুর্যের উদয় নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। যতই কিলিয়েন এমব্যাপে মহাতারকা হয়ে উঠুন, যতই গতবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা আরও জমাট দেখাক, সেমিফাইনালে মরক্কো কিন্তু ফ্রান্সের শক্ত গাঁট হবে, এটা বলাই যায়।
যে দুজনের কথা বাদ দিলে এবারের বিশ্বকাপে আবেগের আখ্যান সম্পুর্ন হয় না , তারা হলেন ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ এবং ভগবান মেসি। দুজনেরই ফুটবল জীবনের সায়াহ্নে , সম্ভবত একে অপরের বিরূদ্ধে শেষবার মাঠে নামছেন। ব্রাজিলের অবর্তমানে গোটা ফুটবল বিশ্বের একটা বড় অংশ যখন মেসির হাতে কাপ দেখতে চাইছে,তখন কিন্তু খুব পিছিয়ে নেই গতবারের রানার্সরাও। হৃদয় চাইছে আবার জ্বলে উঠুক সেই বিখ্যাত বাঁ পা,নিখুঁত মাপা পাসে ডিফেন্স চিরে যাক, কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে লুকা মদ্রিচের বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল ও গোটা দলকে উদ্বুব্ধ করার ক্ষমতা কিন্তু বেশ মাত্রায় বজায় রয়েছে।
এই বিশ্বকাপেই শেষ হয়ে গেল বা যাচ্ছে ফুটবলের একটা জ্বলজ্বলে অধ্যায়। একটা প্রজন্মের স্বপ্নের হিরোদের বুট তুলে রাখার বিশ্বকাপ এটা। মেসি,রোনাল্ডো,নেইমার ,ম্যুলার,মদ্রিচের আবেশে আচ্ছন্ন একটা গোটা প্রজন্ম। আগামী চারবছরে টেমস দিয়ে বইবে অনেক জল, উঠে আসবে আবারও বিশ্ব কাঁপান কিছু নাম, কিন্তু আবেগের মাপকাঠিতে এদের অবস্থান “এ স্বাদের ভাগ হবে না” গোছেরই।