
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক : ব্যবসা বাড়ছে, একরাশ স্বপ্ন নিয়ে পা দিয়েছিলেন বাংলাদেশে। সেটাই যে কাল হবে , সেটা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেন নি উত্তর ২৪ পরগনার পলতার ব্যবসায়ী নীলেশ বিশ্বাস। যাদের ভেবেছিলেন বাংলাদেশের ব্যবসার সহযোগী,তারা যে আদতে সে দেশের “হার্ডকোর ক্রিমিনাল”, মোটেও টের পাননি নীলেশবাবু। প্রথমে অপহরন,পরে আটকে রেখে অকথ্য অত্যাচার,যৌনহেনস্থা,বাংলাদেশী পুলিশের অসহযোগীতা সবই প্রত্যক্ষ করলেন এই ভারতীয় ব্যবসায়ী। এমনকি ভারতে এসেও তাঁকে খুন করার হুমকি দিয়েছে দুষ্কৃতীরা,এখানেও নাকি তাদের “কানেকশন” আছে, অভিযোগ এমনই।
২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশে ফল ও সব্জি রপ্তানী শুরু করেন পলতার ব্যবসায়ী নীলেশ বিশ্বাস। প্রথমে সীমিত আকারে থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিসর বাড়তে থাকে। পরিচয় হয় সেখানকার নানান ব্যবসায়ী মহলের সাথে। ২০২১ সাল থেকেই ফুলে ফেঁপে ওঠে তাঁর ব্যবসা। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর রপ্তানী ব্যবসায় মুনাফা হতে থাকে ভালই । চলতি বছরের গত ২৯শে নভেম্বর একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে তিনি বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পা রাখেন। ইমিগ্রেশনের পর্ব মিটতে , তিনি যেই বাংলাদেশের মাটিতে পৌঁছান, তখন সেখান থেকেই তাকে অপহরন করা হয় বলে অভিযোগ। অপহরন করার পর তাকে কোন একটি অজানা গ্রামে অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয়। এবং সেখানে তাঁর ওপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়। মারধোরের পাশাপাশি তাঁর ওপর যৌন হেনস্থাও করা হয় বলে জানান নীলেশ বাবু। ৪ঠা ডিসেম্বর ওই ব্যবসায়ীর স্ত্রীকে ফোন করে ভারতীয় মুদ্রায় ২০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন চায় বাংলাদেশী দুষ্কৃতীরা। তাঁকে দিয়ে একটি সাদা স্ট্যাম্প পেপারে সইও করানো হয় বলে অভিযোগ। এর আগে তাঁর পাসপোর্ট সহ ব্যাগ কেড়ে নেয় ওই দুষ্কৃতীরা।
এই ঘটনায় চরম উৎকন্ঠার মধ্যে পড়ে যান ব্যবসায়ীর পরিবার। ব্যবসায়ীর স্ত্রী স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে , অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। এরপর তিনি হাইকোর্টের আইনজীবি ঋষিরাজ মহান্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ হাইকমিশনারে যোগাযোগ করলে সেখান থেকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় । এরপর আইনজীবির পরামর্শেই তিনি কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রকের শরনাপন্ন হন। ৫ ডিসেম্বর ই মেইল মারফৎ অভিযোগ দপ্তরে জমা পড়তেই নড়েচড়ে বসে মন্ত্রক। অভিযোগ পত্রে নির্দিষ্ট কিছু নাম উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীর স্ত্রী।নামগুলি হল তুহিন,বদরুল জামান, নইম,ইদ্রিস আলি বিপ্লব,মহ: মহিউদ্দিন, সৈয়দ রহিম মইনুদ্দিন। এরমধ্যে শেষোক্ত ব্যক্তি ভারতীয় বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ আছে। সেখান থেকে বাংলাদেশে ভারতীয় দুতাবাসের সাথে যোগাযোগ করা হয়। এবং ভারতীয় দুতাবাসের উদ্যোগে ,বাংলাদেশ পুলিশ ব্যবসায়ীকে দুষ্কৃতীদের কবল থেকে উদ্ধার করে বেনাপোল সীমান্তে মৌ হোটেল নামক একটি আস্তানায় নিয়ে এসে তোলে।
কিন্তু সেখানেও নিস্তার মেলেনা ওই ব্যবসায়ীর। বাংলাদেশ পুলিশের এই আস্তানা কার্যত ওই দুষ্কৃতীদেরই একটি আখড়া , সেটা বুঝতে পারেন নীলেশ। ওই হোটেলেও তাকে শারীরিক হেনস্তা সহ প্রানে মারার হুমকি দিতে থাকে অভিযুক্তরা। অবশেষে বিএসএফ এবং নীলেশ বাবুর আইনজীবি ঋশিরাজ মহান্তির উদ্যোগে এদেশের মাটিতে পা রাখতে সক্ষম হন নীলেশ বিশ্বাস। বর্ডার পেরনোর সময়েও তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রাননাশের হুমকি দেয় বাংলাদেশী দুষ্কৃতীরা এবং ভারতে এসেও তাকে আগামী দিনে খুন করার শাসানি দেয়। নিজের বাড়ীতে ফিরেও আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন ওই ব্যবসায়ী। নিজের ও পরিবারের প্রান বাঁচাতে তিনি দ্বারস্থ হয়েছেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের।
কিন্তু কেন তাকে অপহরন করল দুষ্কৃতীরা ? এই বিষয়ে তাঁর আইনজীবি ঋষিরাজ মহান্তি জানান যে একজন ভারতীয়,বিশেষ করে হিন্দু ব্যবসায়ীর বাংলাদেশে ব্যবসা করে মুনাফা করাতেই আপত্তি সেখানকার মৌলবাদী ব্যবসায়ীদের।
গোটা ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে ভারত-বাংলাদেশের অত্যন্ত সুসম্পর্ক,সেখানে জনাকয়েক অসামাজিক অপরাধীর কারনে ছেদ পড়বে ব্যাবসায়িক সম্পর্কে ? অভিযোগ অনুযায়ী বাংলাদেশ রাইফেলসের ভূমিকাও অত্যন্ত নেতিবাচক। বেনাপোল সীমান্তে বাংলাদেশ রাইফেলস এর কার্যালয়ের সামনেই একটি হোটেলে নিগৃহীত হতে হচ্ছে এক ভারতীয় ব্যবসায়ীকে , এটা কি আদৌ স্বস্তিতে রাখবে শেখ হাসিনা সরকারকে ? যেখানে দু দেশের কুটনৈতিক সম্পর্ক যথেষ্ট উষ্ণ, সেখানে গুটিকয়েক মৌলবাদীর আক্রমনের শিকার এক ভারতীয় ব্যবসায়ীকে চরম হেনস্থা ব্যতিক্রমী হয়েই থাকবে , এমনটাই অন্তত আশা রাখে দুই দেশের সরকার সহ সাধারন মানুষ।