
৯৯ ডিজিটাল ডেস্ক,দুর্গাপুর : ছেলে-পুত্রবধু মাকে নিয়ে এসেছিলেন সুচিকিৎসার জন্য। কিন্তু সামান্য অক্সিজেন সিলিন্ডার না মেলায় ছটফট করতে করতে মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ার। গাফিলতি ,অবহেলা নাকি চরম দায়িত্বজ্ঞান হীনতা ? কি বলবেন একে ? মানুষের বেঁচে থাকতে যে অক্সিজেন প্রয়োজন , এটা নার্সারির শিশুরাও জানে। অসুস্থ হলে বা শ্বাসকষ্ট হলে যে প্রয়োজনটা কয়েকগুন বেড়ে যায় , সেটা আবার চিকিৎসক,নার্স বা চিকিৎসা কর্মীরা ভাল বোঝে ! কিন্তু হায় , এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কেউই বুঝলো না বা বলা ভাল বোঝার প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করল না। তাই যখন এমার্জেন্সি থেকে রুগীকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার নিদান হাসপাতালই দিল , তখন শ্বাসকষ্টের রুগীকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সিলিন্ডার টুকুও দিল না দুর্গাপুর ইএসআই হাসপাতাল । লিখতে একটু ভুল হল , দিয়েছিল কিন্তু ফাঁকা। একটা নয় , দু-দুটো,কিন্তু ফাঁকা ! ভর্তি ৩য় টা আনতে আনতেই প্রৌঢ়া মায়া কাটালেন এই ধরিত্রীর ! কি নিদারুন যন্ত্রনায় শেষ নিশ্বাস বেরলো বাঁকুড়ার খাতড়া ব্লকের হিড়বাঁধের বাসিন্দা বাদুলি কর্মকারের , সেটা নিশ্চয়ই অনুমেয়।
গত শনিবার ছেলে ও পুত্রবধুরা মিলে মা বাদুলি দেবীকে বুকে ব্যাথা ও তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে দুর্গাপুরের ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতাল কতৃপক্ষ রুগীকে রাজবাঁধের একটি বেসরকারী হাসপাতালে স্থানান্তরনের পরামর্শ দেয়। সেইমত এদিন গুরুতর অসুস্থ বাদুলি দেবীকে ওই হাসপাতালে স্থানান্তরনের জন্য হাসপাতালেরই এ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। দুর্ভাগ্য বাদুলি দেবীর , এ্যাম্বুলেন্সের অক্সিজেন সিলিন্ডার যে যে খালি , সেটা আবিষ্কার করেন পরিবারের লোকজন। তড়িঘড়ি এমার্জেন্সি থেকে পরপর দুটি সিলিন্ডার নিয়ে আসা হয়। ততক্ষনে তীব্র শ্বাসকষ্টে ছটফট করছেন রুগী, পুত্রবধু পিংকি কর্মকারকে বারংবার অক্সিজেন দেওয়ার কথা বলছেন ” অক্সিজেন না দিলে মারা যাব”। এটাই ছিল তাঁর শেষ উক্তি। এমার্জেন্সি থেকে আনা দুটি সিলিন্ডারও খালি বের হয়। কিন্তু ৩ য় ভর্তি সিলিন্ডার আনার আগেই সব শেষ , আস্তে আস্তে নিথর হয়ে যায় দেহ , জানালেন পিংকি।
বিস্ময় জাগে এখানেই , যে সিলিন্ডারটি এমার্জেন্সি থেকে আনা হয়েছিল , সেটির গায়ে “ফুল”অর্থাৎ ভর্তি স্টিকার দেওয়া ছিল। কিন্তু আদতে তা ছিল “ফাঁকা”। কিভাবে এটা সম্ভব হল , সেটা অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষ । বাদুলি দেবীর দুই ছেলে ধনঞ্জয় ও রামকৃষ্ণ কর্মকার গোটা ঘটনার জন্য হাসপাতাল কতৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন এবং দোষী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দাবী করেছেন। মৃতার আত্মীয়রা এই ঘটনায় হাসপাতাল চত্বরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
হাসপাতাল সুপার ডা: দীপাঞ্জন বক্সি জানালেন যে তিনি ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত করবেন ও দোষী প্রমানিত যারা হবে , তাদের শাস্তির সুপারিশ করবেন।
এক শ্রেনীর কর্মীর গাফিলতি ও কতৃপক্ষের কড়া নজরদারির অভাবেই যে এই অঘটন ঘটল , তা দিনের আলোর মতন পরিষ্কার । কিন্তু সব প্রশ্ন ছাপিয়ে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভর্তি স্টিকার দেওয়া খালি অক্সিজেন সিলিন্ডার ! গলতটা কার ? নাকি কতৃপক্ষের নজর এড়িয়েই চলছে অন্য কোন “ধান্ধা” , সেদিকে নিশ্চয়ই নজর থাকবে ৯৯ বাংলার।