
কৌশিক বসু,দুর্গাপুর : মধুচক্রের বেশ একটা কেতাবী নাম রয়েছে , “প্রাইভেট পার্টি” কিংবা সংক্ষেপে “পিপি’ ! সেই “পিপি” র টানেই দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার স্থিত এক অভিজাত হোটেলে ভীড় জমিয়েছিল বেশ কিছু নারী পুরুষ। সেই “পিপি” র আবার বেশ কায়দা করে হোটেলের সাথে চুক্তি করাও হয়েছিল। রাত বেড়েছে , রঙ্গীন আলোয় শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সুসজ্জিত কামরায় উষ্ণ পানীয়ের সঙ্গে নারী সঙ্গের মৌতাত বেশ জমে উঠেছিল। স্বল্প বসনাদের দেহবল্লরীতে পানীয়ের গ্লাসের সাথে সাথে পুরুষের হৃদয়ে তুফান, সঙ্গে নকল টাকার বর্ষা ! পৃথিবীর আদিমতম পেশার আধুনিক ভার্সানে ম ম করছে হোটেল প্রাঙ্গন, আর মায়াবী নেশায় বুঁদ জোড়ায় জোড়ায় ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীরা সেঁধিয়ে যাচ্ছে হোটেলের আরামদায়ক “নিরাপত্তা”য়। আর এই “পিপি” র আয়োজকরা তখন “কড়ি” গুনে নিতে ব্যস্ত !

সমারোহ চলছিল ভালই , কিন্তু বাদ সাধল দুর্গাপুরের পুলিশ। একযোগে হানা দিল এই অভিজাত হোটেলে। “মধু”র নেশা কেটে তখন থরহরি কম্প , কাঁপছে হোটেলের ম্যানেজার , আয়োজক সবাই। একে একে ৫ পুরুষ ও ৪ মহিলাকে আটক করল পুলিশ। হোটেলের লাউঞ্জে , ঘরে ছড়িয়ে তখন “পিপি”র চিহ্ন , মদের বোতল , নকল টাকা, অভুক্ত খাবার,বিলাসিতার নানান চিহ্ন। সঙ্গে পুলিশের জালে বর্ধমান নিবাসী জনৈক অভিজিত , যে নাকি এই “পিপি” র আয়োজক । যদিও ” সব বাজে কথা ” বলে গোটাটাই অস্বীকার করেছেন ওই অভিজিৎ। বেশ কিছু বছর আগে বিধান নগরের স্টিল পার্ক স্থিত এক হোটেলে এই অভিযোগে হোটেল ভাঙচুর করে স্থানীয়রা , সুত্রের খবর , তখন এই হোটেলেই ম্যানেজার ছিলেন অভিজিৎ।

দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের আসর বসছিল সিটি সেন্টারের এই অভিজাত হোটেলে , এমনই খবর ছিল পুলিশের কাছে। শুক্রবার রাতেও গোপন সুত্রে পুলিশের কাছে খবর আসে এই মৌতাতের।
তারপরেই এই পুলিশী অভিযান।
হোটেলের ম্যানেজার আসরাফ হোসেনের যুক্তি , চুক্তি পত্র অনুযায়ী গেট টুগেদার হওয়ার কথা,কিন্তু তা নাকি হচ্ছিল না। রাত বাড়তেই তিনি নাকি বুঝতে পারেন “অন্যকিছু” হচ্ছিল , তিনি নিষেধও করেন , কিন্তু আয়োজক অভিজিত নাকি তা শোনেননি,যুক্তি দেন হোটেল ম্যানেজার। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে , যদি বারন নাই শুনে থাকে , তাহলে হোটেল কতৃপক্ষ পুলিশের দ্বারস্থ হলেন না কেন ? “সর্ষের ভেতরে ভুত” তত্বই কি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না ?

লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এই “প্রাইভেট পার্টি”র আয়োজন করা হয়ে থাকে। সমাজের উচ্চবিত্ত মহলই এই “পিপি” র “মুর্গা”। সুত্রের খবর , সিটি সেন্টারের মতন অভিজাত এলাকাকেই আয়োজকরা বেছে নেয় এই মৌতাতের মৌরুসিপাট্টার জন্য। তবে এটাই প্রথম নয় , দীর্ঘদিন ধরেই ওই এলাকায় একাধিক অভিজাত হোটেল সহ নানান স্থানে চলে আসছে “রিপুসুখ” এর এই আয়োজন। আয়োজকরা খুঁজে নেয় “প্রভাবশালী” দের নিশ্চিন্তের ঠিকানা , যেখানে পুলিশী ঝক্কি নেই ! শুধু দুর্গাপুর নয় , খনি অঞ্চল সহ প্রতিবেশী রাজ্য থেকেও “মুর্গা” আসে সাময়িক সুখের খোঁজে, আর পকেটে গোছা গোছা টাকা ঢোকে আয়োজক সহ হোটেল মালিকের। টাকার বিনিময়ে এই পার্টিতে চলে “আইটেম নাচ”, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়ে আসা হয় মহিলাদের। ওড়ে আসল টাকার বিনিময়ে পাওয়া নকল টাকা। বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের সাথে থাকে দামী পানীয়। রাত বাড়ে , নেশা দ্বিগুন হয়, “আইটেম নাচ” পরিনত হয় অন্য “আইটেম” -এ। শহরের হৃদপিন্ড সিটিসেন্টারে এভাবেই রাত নামে , নিয়ন আলো জ্বলে , মায়াবী আলোয় সভ্য জগতের দীর্ঘশ্বাস আরও গভীর হয়।