
কৌশিক বসু , দুর্গাপুর : ৯৯ নিউজ বাংলার আগের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছিল যে বেশ কিছু “প্রভাবশালী” র মদতে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের বুকে প্রায়শই চলছে “প্রাইভেট পার্টি”,যেখানে বাইরে থেকে মহিলা ভাড়া করে এনে অশ্লীল নাচ , মদের আসর সহ নানান অনৈতিক কাজ হচ্ছে। সেই সুরই শোনা গেল দুর্গাপুরের এসিপি তথাগত পান্ডের গলায়। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে ৬ জন পুরুষকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে , ৫ মহিলাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর পেছনে অনেক পান্ডা আছে , তদন্ত করে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। ধৃতদের শনিবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হলে এক ব্যক্তির দু দিনের পুলিশি হেফাজত ও বাকি পাঁচজনের চারদিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। উদ্ধার হওয়া পাঁচ মহিলাকে হোমে পাঠানো হয়।

সিটি সেন্টারের প্রানকেন্দ্রে একটি বিলাসবহুল হোটেল , সামনে শহরের অন্যতম শপিং মল , হাসপাতাল সহ একাধিক বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রায়শই কিভাবে বসছে বসছে এই আসর , সেটাই বিস্ময়ের। এসিপির বক্তব্য অনুযায়ী ওই হোটেলের বার লাইসেন্স ও নেই। তা সত্বেও মদের ফোয়ারা কিভাবে ছুটছে ? উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে আসল টাকার বিনিময়ে নকল টাকা দেওয়া হত , এবং নেশায় চুর “ক্লায়েন্ট” সেই টাকা ওড়াতো নর্তকীদের উদ্দেশ্যে। ১০০০ টাকার বিনিময়ে ১০০ টি নকল ১০/- টাকার নোট ! সেই টাকাই ওড়ানো হত প্রায়-নগ্ন নর্তকীদের লক্ষ্য করে। প্রাচীন “বাবু কালচার” এর আধুনিক রূপ। বৃহষ্পতিবার রাতে হোটেল ম্যানেজার দাবি করে যে জনৈক অভিজিৎ নামের এক ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ হয়ে ভাড়া নিয়েছে অনুষ্ঠানের জন্য। যে বক্তব্য নস্যাৎ করেছেন এসিপি। এই পুলিশ আধিকারিক জানান যে ভাড়া নেওয়ার তথ্য সম্পুর্ন মিথ্যে কথা কারন হোটেলের কর্মীও ধরা পড়েছে। বাইরে থেকে মেয়ে এনে হোটেলের ভেতর অশ্লীল নাচ কেন হবে,প্রশ্ন পুলিশ কর্তার। এই প্রশ্ন শহরের সাধারন মানুষেরও। কিন্তু যে “পান্ডা”দের কথা বলছেন এসিপি,তারা কবে প্রকাশ্যে আসবে,প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।

অন্যদিকে এই ইস্যুতে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলিও। শনিবার সকালে হোটেলের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপির মহিলা সদস্যরা। বিজেপি নেত্রী মনীষা শিকদার জানান যে তারা এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও দুর্গাপুর নগর নিগমের মুখ্য প্রশাসকের ( দুজনেই মহিলা) দৃষ্টি আকর্ষন করছেন , অবিলম্বে এই অনৈতিক কাজ বন্ধের দাবি জানান মহিলারা।
অন্যদিকে কংগ্রেস জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী নকল টাকা ওড়ানোর বিরূদ্ধে সরব হয়েছেন। তিনি সাফ জানান ,”এভাবে নোটের অবমাননা করা যায় না।তা সে প্লাস্টিকের হোক বা কাগজের।এটা একরকম অপরাধ। তবে বর্তমান এই রাজ্যে সবই সম্ভব।যেভাবে কর্পোরেশন ও ফাঁড়ির নাকের ডগায় সিটিসেন্টারের মত জনবহুল জায়গায় দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটছে তাতে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত”।

শুক্রবার রাতের পুলিশী অভিযানে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহর জুড়ে। শহরের হাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল প্রাইভেট পার্টির নামে চলা এই অশ্লীলতার,সেটার প্রমান মিলল। কিন্তু “ইহা শেষ হইয়াও হল না”, সিটি সেন্টারে আরও কোথায় রাতের অন্ধকারে চলছে অতি “প্রাইভেট পার্টি” এবং তার “পান্ডা” কে বা কারা,পুলিশের সাথে সাথে জানতে আগ্রহী এই শহরের তামাম মানুষও।