
নম্রতা সামন্ত, ৯৯ বাংলা নিউজ ডেস্ক : শান্তিপুরে প্রসিদ্ধ হস্তচালিত তাঁত শিল্প। আর সেখানেই আজ ঘনাচ্ছে অন্ধকার।মুখ ফেরাছে তরুণ প্রজন্ম। জীবিকা পরিবর্তনের পথে হাঁটছেন এই শিল্পীজগৎ।কেন এই বিপন্নতা।একনজরে, নদিয়ার শান্তিপুর- ফুলিয়া।
অতীতের গণ আন্দোলনের বিজয় পতাকার জন্য আজও জীবিত শান্তিপুরের তাঁত। নদিয়ার শান্তিপুর শহরটি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে শান্তি ও ঐতিহ্যের শহর নামে পরিচিত হলেও বাংলার মানুষের কাছে শহরটির আসল পরিচয় জড়িয়ে আছে শান্তিপুরী শাড়ির সঙ্গে। শান্তিপুরী শাড়িকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তাঁত শিল্প শান্তিপুরের অর্থনীতির এক অন্যতম চাবিকাঠি। একসময় নদীয়ার শান্তিপুরে প্রায় ৮৫% মানুষ হস্তচালিত তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রায় দেড় লক্ষএর বেশি হাতে বুনা তাঁত ছিলো শান্তিপুরে। লকডাউনের পর সংখ্যা কমে দাঁড়ায় তিনশো। সুতোর কারখানা ছিল পাঁচশোর বেশি।শ্রমিক সংখ্যা ছিল প্রায় সাত হাজার।বর্তমানে, কারখানার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে পঞ্চাশ থেকে ষাট। শতিনেক শ্রমিক কাজ করছেন।একটা সময় ছিল তাতির ছেলে তাঁত বুনতো এখন আর বোনে না কারণ শান্তিপুরের তাঁতশিল্পী আজ প্রায় বলা যায় বিলুপ্তির পথে। এখানে ভিন রাজ্য থেকে শাড়ি আসে সস্তায়। শান্তিপুর পারছে না তাদের সাথে প্রতিযোগিতায়।
একজন সুতোর ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ভিন্ন রাজ্য থেকে উন্নতমানের মেশিন নিয়ে আসছে নিয়ে আসছে ওরা। ওখানে যে সমস্ত শাড়ি তৈরি করেছে সেগুলো সেই হাটে বাজারে যাচ্ছে। কিন্তু সাথে যে মানুষ সারাদিন কাজ করেছে ন্যূনতম মজুরি সেই মজুরি টুকুও পাচ্ছেনা।স্বাভাবিকভাবেই, শরীর দামের ডিফারেন্স এর জন্য শান্তিপুরের তাঁতের শাড়ি বিক্রিও কম বিক্রি হচ্ছে। সাথে গরিমাও হারিয়েছি। একসময় প্রতিটি বাড়ির ঘরে ঘরে ছিলো এই শিল্প। এক্ষণ সারা গ্রাম ঘুরে দেখা যাচ্ছে একটি দুটি তাঁতি। এই প্রসঙ্গে, শান্তিপুরের তাঁতশিল্পী জানিয়েছেন, তারা পারছেন না অন্য কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত হতে। তাই কোনো ভাবে তাঁত বুনে অথবা পরিবার অন্যত্র কাজ করে দুবেলা খাবার জটাচ্ছে।শান্তিপুরে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষের কাছাকাছি মানুষ বসবাস করলে তার মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষ তাঁতি ছিলেন। আর সেই হস্তচালিত শিল্প একেবারেই বিলুপ্তির পথে।এছাড়াও , জানা গিয়েছে, নতুন করে আর কেউ হাতের কাজ আর শিখছে না।কারণ, এর আর ভবিষ্যত নেই বললেই চলে। আজ সুতোর শাড়ির চাহিদা কমেছে। সঙ্গে বিক্রি বাট্টা কম। রোজগার কম। পেটের তাগিদে সবাই ভিন রাজ্যের পথে।নতুন প্রজন্ম মুখ ফিরিয়েছে এই শিল্প থেকে। ক্রমে ক্রমে শেষ হয়ে যাচ্ছে এই তাঁতশিল্প।