
নিজস্ব প্রতিবেদন, বাঁকুড়া : তিনি না থাকলেও তাঁর স্মৃতি রয়ে গেছে। নেতাজির স্পর্শ পাওয়া চেয়ার আজও যত্নে গুছিয়ে রেখেছে বাঁকুড়ার দেশুরিয়া গ্রামের কর্মকার পরিবার। আজ নেতাজির জন্মবার্ষিকীতে সেই স্মৃতি ফের একবার সবার সামনে এনেছেন এই কর্মকার পরিবার।
সালটা ছিলো ১৯৪০। ভারতবর্ষ তখনো পরাধীনতার শিকলে বন্দি। ভারতকে অত্যাচারী ব্রিটিশদের হাত থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য বহু দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। বাদ পড়েনি লালমাটির বাঁকুড়াও।নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এসেছিলেন বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটি থানার অমরকাননে সভা করতে। সেখানে দেশপ্রেমিক গোবিন্দ প্রসাদ সিংহের সাথে দেখাও করেন তিনি। পরে সভা করেন সেখানেই। সভাস্থলে সভা মঞ্চে নেতাজিকে বসার জন্য সোফার আয়োজনও করা হয়। নেতাজি মঞ্চে উঠে সেই সোফার সরিয়ে দিয়ে টেনে নিয়েছিলেন অন্যান্য নেতাদের জন্য মঞ্চে থাকা কাঠের চেয়ার। ওই সভায় যে কাঠের চেয়ারটিতে তিনি বসেছিলেন, তা আনা হয়েছিল স্থানীয় চিকিৎসক রামরূপ কর্মকারের চেম্বার থেকে। সভা শেষে সুভাষ চন্দ্র বসু চলে যান।এরপরই কাঠের ওই চেয়ারকে মাথায় করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান দেশুড়িয়া গ্রামের রামরুপ কর্মকার। আর এই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্পর্শ করা চেয়ার আজও দেবতার আসনে পুজো করে গঙ্গাজলঘাটির কর্মকার পরিবার।
সাধারণ একটা কাঠের চেয়ার। তাকে ঘিরেই জড়িয়ে রয়েছে একরাশ স্মৃতি। থাকবে নাই বা কেন! এই চেয়ারেই যে একদিন বসেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তারপর থেকে আর কেউ কোনও দিন ওই চেয়ারে বসার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি।আর এই চেয়ার এখন কর্মকার পরিবারের ঠাকুর ঘরেই তার ঠাঁই হয়েছে। সেখানে দেবজ্ঞানে পূজিত হয় নেতাজির স্মৃতি বিজড়িত চেয়ারখানা। আজও রোজ নিয়ম করে ফুল দেন পরিবারের সদস্যরা। প্রতি বছর ২৩শ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিনেও নিবেদন করা হয় বিশেষ শ্রদ্ধা।
রামরূপের পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘এই চেয়ারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নেতাজির স্মৃতি। সেদিন নেতাজির সভা শেষ হওয়ার পর দাদু চেয়ারটি মাথায় করে আমাদের বাড়িতে এনেছিল। তারপর থেকে এই চেয়ারে কেউ কোনও দিন বসেনি। তার স্থান হয়েছে একেবারে ঠাকুর ঘরে। দাদু আজীবন শ্রদ্ধা ভরে চেয়ারটিকে পুজো
করে গিয়েছেন। পরিবারের বর্তমান সদস্যরাও সেই নিয়ম ধরে রেখেছে।’
জানা গিয়েছে, ১৯৪০-এর ওই দিন নেতাজি ফেরার সময় গঙ্গাজলঘাটির বিড়রা গ্রামের বাসিন্দারা রাস্তায় শুয়ে পড়ে তাঁর গাড়ি থামিয়েছিলেন। স্থানীয়দের আবদারে সেখানে পাঁচ মিনিট বক্তৃতা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। পরবর্তীতে সেখানে নেতাজির স্ট্যাচু বানিয়েছে স্থানীয় ক্লাব। তারপর থেকে ২৩শে জানুয়ারি দিনটি পালিত হয়।